সহজভাবে উমরাহ করার নিয়ম
উমরাহ করার নিয়ম উমরাহ পরিচিতি ও পূর্ণ গাইড লাইন PDF Book সহ ডাউনলোড করুন। ইসলামী শরীয়তে উমরাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান একটি ইবাদাত, আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি ইবাদাত। উমরাহ একটি নফল ইবাদাত যার মাধ্যমে বান্দা তার গুনাহ সমূহ মাফ করে নিতে পারে।
এবং উমরাহ্র আরো অনেক ফজিলত অর্জন করতে পারে দেখুন।
উমরাহ العمرة পরিচিতি।
العمرة / উমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, কোনো স্থানের যিয়ারত করা। ইচ্ছা করা বা কা’বা ঘর যিয়ারতের ইচ্ছায় উমরাকারী হওয়া।
ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় উমরাহ বলা হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বছরের যে কোনো সময় মসজিদুল হারামে গমন করে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা।
উমরাহ্র বিধানালী/হুকুম-আহকাম
উমরাহ্র ফরজ হলো ৩ টি,
১। উমরাহর নিয়তে ইহরাম পরিধান করা।
২। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা (৭ বার তাওয়াফ/প্রদক্ষিন করা)
৩। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সায়ী’ করা।
উমরাহর ওয়াজিব হলো ২ টি,
১। উমরা কারীর মীকাত থেকে ওমরার ইহরাম পরিধান করে নেয়া।
২। সাত তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইব্রাহিমের কাছে দুই রাকাত নামাজ পড়া।
৩। ওমরার সকল কার্যক্রম আদায়ের পর মাথা মুণ্ডন/কামিয়ে নেয়া, অবথা কসর/চুল ছোট করে নেয়া। নারীদের জন্য শুধু এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল ছোট করা।
উমরাহ্র সুন্নাত হলো ৪ টি,
১। হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা, যদি অন্যকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হয়।
২। শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য তাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর রমল করা বা একটু বীরত্বের সহিত হাঁটা।
৩। শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য এই প্রথম তিন তাওয়াফে ইদতেবা করা বা চাদরকে ডান বোগলের নিচ দিয়ে পরিধান করা। তথা: ডান কাঁধকে খালি রাখা।
নারী-পুরুষের ইহরাম বাঁধার সহজ পদ্ধতি
উপরের ভিডিওটিতে আপনি অবশ্যই দেখতে পেয়েছেন যে, খুব সহজে কিভাবে পুরুষদের ইহরামের লেবাস বা কাপড় পরিধান করা যায়। তবুও আমরা নিম্নে পুরুষের ইহরাম বাধার সহজ পদ্ধতিটি বলে দিলাম।
উমরাহর ইহরাম বাঁধার জন্য সর্বপ্রথম কাজ হলো ইহরামের কাপড় পরিধানের আগে সাধারণ পরিচ্ছন্নতার কাজ সেরে নেয়া – নখ কাটা, লজ্জাস্থানের চুল পরিস্কার করা, গোঁফ ছোট করা। তবে দাঁড়ি ও চুল কাটবেন না। পরিচ্ছন্নতার এই কাজগুলো করা মুস্তাহাব।
এরপর সুন্নাত গোসল করে ইহরামের কাপড় পরিধান করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা তাহিয়্যাতুর ওজু হিসেবে। যদি কোন কারণে গোসল করা সম্ভব না হয়, তাহলে অজু করে ইহরাম বেঁধে নিবে।
পুরুষের ইহরাম বাঁধার নিয়ম
এই যে, পুরুষের হজ্ব বা উমরাহ পালনের জন্য ইহরাম পরিধান করতে শুধুমাত্র দুইটি সেলাই বিহীন সাদা কাপড়ের প্রয়োজন হয়। যার একটিকে শরয়ী পারিভাষায় الإزار/ইজার বা লুঙ্গি বলে আর অন্যটিকে الرداء/রিদা বা চাদর বলে।
এই কাপড় দুটি পরিধানের সহজ পদ্ধতি হলো, লুঙ্গি ও চাদর পরিধানের ক্ষেত্রে ভিডিওতে দেখানো পদ্ধতিটি অবলম্বন করুন। কারণ এই বিষয়টি বর্ণনা করে বুঝানো কঠিন। তাই ভিডিওতে দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
বিঃদ্রঃ এই দুইটি কাপড় বিহীন পুরুষদের জন্য ইহরাম বা মুহরিম অবস্থায় অন্য কোন সেলাই করা কাপড় পরিধান করা জায়েজ নেই। যেমন টুপি অথবা পায়ের টাখনু ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা। যদি কেউ পরিধান করে, তাহলে তাকে দম বা জরিমানা দিতে হবে।
নারীদের ইহরাম বাঁধার নিয়ম
নারীরা উমরাহ্ পালন করার জন্য প্রথমে মুহরিম হওয়ার উদ্দেশ্যে গোসল করে নিবেন। গোসল করা সুন্নাত। কিন্তু হায়েজ অথবা নেফাস গ্রস্থা হলে গোসল করা ওয়াজিব।
আর যদি গোসল করার ব্যবস্থাপনা না থাকে। তাহলে স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় শুধুমাত্র অজু করে ইহরামের নামাজ বা তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ পড়ে উমরাহ্র নিয়ত করে নিবেন।
নারীদের ইহরামের কাপড় পরিধান করার পদ্ধতি হলো, নারীরা উমরাহ্র ইহরামের জন্য তার স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় ও হিজাব সহকারে পর্দার কাপড় পরিধান করে ইহরাম বাঁধবে/মুহরিম হবে।
এবং এতে শুধুমাত্র মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখতে পারবে। হ্যা তবে গাইরে মাহরামের সামনে পড়লে হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে নিবে, অন্যথায় ক্যাপ বা এই জাতীয় কিছু মাথায় দিয়ে তার উপর পর্দা টেনে দিবে।
সতর্কতাঃ নারীগণ কোন অবস্থাতেই পুরুষদের মত সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান করবে না। বরং তারা পূর্ণ পর্দার হুকুম-আহকাম মেনে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করবে।
বর্তমান সময়ে কিছু কিছু নারী উমরা পালনকারীকে সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান করে উমরাহ্ পালন করতে দেখা গেছে। যেটি শরিয়ত সমর্থিত নয়।
উমরাহ্ বা হজ্বের ইহরামের কাপড় কোথায় পরিধান করবেন?
হজ্ব বা উমরাহ্ পালনকারী নারীদের যেহেতু নির্দিষ্ট আলাদা কোন ইহরামের পোশাক নেই। তাই তারা তাদের পছন্দমত শরয়ী পর্দা রক্ষাকারী পোশাকটি ঘর থেকেই পরিধান করে বের হবেন। এবং মিকাতে নেমে নফল নামাজ পড়ে ওমরার নিয়ত করে নিবেন।
আর পুরুষরা মিকাতের পূর্বে যে কোন জায়গা থেকে ইহরামের কাপড় পরিধান করতে পারবেন। ঘর থেকে অথবা বিমানবন্দর থেকেও ইহরামের লেবাস পরিধান করতে পারবেন।
তবে যদি মিকাতে নামার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে মিকাতে নেমে গোসল করে ইহরামের কাপড় পরিধান করা উত্তম।
মিকাত কি ও মিকাত কয়টি এবং বাংলাদেশীদের মীকাত কোনটি? মিকাত সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
উমরার নিয়ত কিভাবে করবেন?
উমরার নিয়ত করার জন্য প্রথমে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু পড়ে নেয়া উত্তম। এবং নামাজ শেষে নিম্নোক্ত উমরাহ্র নিয়তটি পড়তে পারেন, অথবা নিজ ভাষায় উমরাহ্র নিয়ত করে আল্লাহর কাছে উমরাহ কবুলের প্রার্থনা করতে পারেন।
কেননা শরীয়ত কর্তৃক কোন আহকামের নিয়ত নির্দিষ্ট শব্দে বলার বাধা-বাধ্যকতা নেই। বরং নিয়ত মানে হলো ইচ্ছা করা, কোন কিছু সম্পাদনের কামনা করা।
সুতরাং আপনি নামাজ শেষে বা যখন উমরাহ্র নিয়ত করবেন, তখন নিয়ত শেষে উমরাহ্র তালবিয়া পাঠ করবেন। এই তালবিয়া পাঠ করার পর থেকেই আপনি মুহরিম হিসেবে গণ্য হবেন।
অনেকেই উমরার আরবী নিয়ত খুঁজে থাকেন, তাই আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে উমরার নিয়ত আরবী ও বাংলা উচ্চারণসহ দেয়া হলো।
উমরাহ্র নিয়ত আরবীঃ
لَبَّيْكَ.. أللَّهُمَّ إِنِّيْ أُرِيْدُ الْعُمْرَةَ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَتَقَبَّلْهُ مِنِّيْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ ○ د
উমরার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহঃ লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা ইন্নি ঊরিদুল উমরাতা ফা-ইয়াস্সিরহুলী ওয়া-তাকাব্বালহু মিন্নি, কামা তাকাব্বালতা মিন ইবাদিকাস সালেহীন।
মুহরিম থাকা অবস্থায় যে যে কাজগুলো করা যাবে না।
উমরার ইহরাম বাঁধার পর থেকে উমরাহ্ পালন শেষ করা পর্যন্ত কিছু কাজ থেকে উমরাহ পালনকারীকে বিরত থাকতে হবে।
১। শরীরের যে কোন অংশের চুল কিংবা পশম কাটা বা ইচ্ছা করে ছেঁড়া যাবে না।
২। ইহরাম বাঁধার পর আর নখকাটা যাবে না।
৪। ঘ্রাণযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো যাবে না।
৫। স্বামী-স্ত্রীর সংগম করা অথবা যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা যাবে না।
৬। কোন প্রকার জীব-জন্তু শিকার করা যাবে না।
৭। কোন জীবজন্তু হত্যা করা যাবে না।
৮। নতুন করে কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বা এই জাতীয় কোন ঘটকালি করা যাবে না।
৯। পুরুষদের মাথায় টুপি পড়া অথবা কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকা যাবে না।
১০। পুরুষদের ক্ষেত্রে পায়ের পিছনের গোড়ালির অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা বা মুজা পরিধান করবে।
১১। হারাম এলাকার মধ্যে কোনো গাছ কাটা, লতা-পাতা ছেঁড়া বা উপড়ে ফেলা যাবে না।
১২। ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে নি।
১৩। পুরুষগণ সেলাই যুক্ত কোন পোশাক পরিধান করবে না।
হজ্ব ও উমরার তালবিয়া
হজ্ব বা উমরাহর নিয়ত করার পর থেকেই বেশি বেশি হজ্ব ও উমরার তালবিয়া পাঠ করবেন। তালবিয়া পাঠে দলাবদ্ধ না হয়ে, নিজে নিজে একটু উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করা শ্রেয়।
তবে নারী মুহরীমাগণ নিম্নস্বরে নিজে ছাড়া অন্য কেউ যেন শুনতে না পায় এমন আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করবে।
হজ্ব ও উমরার তালবিয়া আরবীঃ
لَبَّيْكَ. اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَاشَرِيْكَ لَكَ لَبِّيْك، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَاشَرِيْكَ لَكَ○ د
হজ্ব ও উমরার তালবিয়া বাংলা উচ্চারণ সহঃ তালবিয়া লাব্বাঈক আল্লা-হুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিʼমাতা, লাকা ওয়াল মূলক, লা শারীকা লাক।
তালবিয়ার অর্থঃ আমি (আপনার দরবারে) উপস্থিত। হে আল্লাহ আমি (নগণ্য বান্দা আপনার গোলামির জন্য) উপস্থিত। আমি আপনার দরবারে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার কোন অংশীদার নেই। (আপনি অংশীদারীত্মের ত্রুটি থেকেও মুক্ত)।
(হে আল্লাহ) আমি উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও আপনার প্রদত্ত সকল নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি শুধুমাত্র আপনারই জন্যে। এবং সমস্ত জগতের একচ্ছত্র আধিপত্য শুধুমাত্র আপনারই। আপনার কোন অংশীদারনেই।
বায়তুল্লাহর তাওয়াফ কিভাবে শুরু করবেন?
পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছানোর পর সর্বপ্রথম হোটেলে উঠে যদি সম্ভব হয় গোসল করে নিবেন। কারণ এটি একটি মুস্তাহাব কাজ যেটি আপনার ক্লান্তি কাটাতেও সহায়তা করবে।
এরপর উমরা পালনের জন্য হেরেম শরীফে প্রবেশ করবেন। মসজিদে হেরেমে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশের দোআ পাঠ করবেন।
মসজিদে প্রবেশের দোয়া।
بِسْمِ اللهِ وَ الصّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ أعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْم وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ اَللهُمَّ افْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحَمَتِكَ
মসজিদে প্রবেশের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহঃ বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল কাদিমি মিনাশ শায়ত্বানির রজিম। আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।
এরপর দোআ পাঠ করে কাবা ঘরের দিকে যাবেন। সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামার সময় সর্বপ্রথম যখন কাবা ঘর দেখবেন।
তখন আপনার মনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্খা পূরণের দোআ করবেন। বা বলবেন হে আল্লাহ আমি এখানে থাকাবস্থায় যত দোআ করবো। আপনি আমার সব দোআ কবুল/মঞ্জুর করবেন।
কারণ সর্বপ্রথম কাবা ঘরের দিকে নজর পড়ার সময় যে দোআ করা হয়, তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।
অতঃপর কাবা ঘরের চতুর্পাশের খালি স্থানে (মাতাফে) পৌঁছানোর পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবেন।
এবং কাবা ঘরের যে কোণে হাজারে আসওয়াদ রয়েছে, সেখান থেকে পুরুষগণ ইজতিবা (তথাঃ গায়ের চাদরকে ডান বোগলের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর পরিধান করবে) এবং একটু বুক ফুলীয়ে বীরত্বের সাথে চলবে।
এই ইজতিবা শুধুমাত্র প্রথম তিন তাওয়াফ বা প্রদক্ষিন করার সময় করবে। বাকী চার তাওয়াফ স্বাভাবিকভাবে চাদর পরিধান করে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে সাত তাওয়াফ পরিপূর্ণ করবে। (সহজভাবে উমরাহ করার নিয়ম )
উমরাহ করার নিয়ম
ইজতিবা করার পর হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করে (যদি কাউকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হয়, তাহলে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করবে।
অন্যথায় শুধু ডান হাত তুলে তার প্রতি ইশারা করে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বা শুধু আল্লাহু আকবার বলে কাʼবা ঘরকে বাম দিকে রেখে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করবেন।
সতর্কতাঃ কাবা ঘরের দিকে ইশারা করার সময় হাতে চুমু খাওয়া যাবে না। আর নারীগণ তাওয়াফ করার সময় ইজতেবা করবে না। তারা তাদের স্বাভাবিক কাপড় পরিধান অবস্থায় থাকবেন এবং স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন।
তাওয়াফ শুরু করার সময় হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাওয়া সুন্নাত। কিন্তু ভিড় করে অন্য হাজ্বীদের কষ্ট দিয়ে ঠেলাঠেলি করে চুমু খাওয়া ঠিক না।
তাওয়াফ শুরু করার দোয়া হলো, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, بسم الله والله اكبر বা শুধু আল্লাহু আকবার الله أكبر।
একটি তাওয়াফে বা একটি উমরায় মোট সাতবার কাবা ঘরের প্রদক্ষিন করতে হয়। প্রতিটি প্রদক্ষিন হাজরে আসওয়াদ বরাবর কর্নার থেকে শুরু হয়ে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর কর্নারে এসে শেষ হয়।
কাবা ঘরের প্রতিটি প্রদক্ষিণে হাজরে আসওয়াদের পূর্বে যে কর্নার রয়েছে যেটিকে রুকনে ইয়ামানি কর্নার বলা হয়।
সেই রুকনে ইয়ামানিকে হাত দিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন। যদি ঠেলাঠেলি না করে স্পর্শ করা সম্ভব হয়, অন্যথায় তাওয়াফ চালিয়ে যাবেন।
কারণ তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানিকে স্পর্শ করা সুন্নত। মনে রাখবেন, রুকনে ইয়ামানিকে চুমু খাওয়া যাবেনা।
এবং রুকনে ইয়ামানি থেকে হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তীস্থানে তাওয়াফের দোআটি পড়বেন। বাকী সময় যিকির-আযকার, তাসবীহ, কোরআন তিলাওয়াত বা দোআ করতে পারেন।
(সহজভাবে উমরাহ করার । নিয়ম ওমরাহ পালনের নিয়ম। ওমরাহ পালনের সঠিক নিয়ম। উমরাহ পালনের সঠিক ও সহজ নিয়ম PDF Book সহ।)
বাইতুল্লাহর তাওয়াফের দোয়া
তাওয়াফের সময় আপনি কুরআন হাদীসে বর্ণিত যে কোন দোয়া পড়তে পারবেন। তাসবীহ, কোরআন তিলাওয়াত ও যিকির-আযকার ও করতে পারেন।
চাইলে আপনি নিজ ভাষায়ও আল্লাহর কাছে আপনার মনের ভাব ব্যাক্ত করে দোয়া করতে পারেন।
তবে শুধুমাত্র রুকনে ইয়ামানির কর্নার থেকে হাজরে আসওয়াদের কর্নার পর্যন্ত তাওয়াফ করার সময় একটি নির্দিষ্ট দোআ রয়েছে, যেটি পাঠ করা সুন্নত।
তাওয়াফের দোয়া টি হলো,
رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
তাওয়াফের সাত চক্করের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহঃ রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আ’যাবান্নার।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।
তাওয়াফের নামাজ
তাওয়াফ শেষ করার পর তথা কাবা শরীফকে সাত বার প্রদক্ষিন করার পর তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হবে।
এই নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে শরীয়তের নিষিদ্ধ কোন সময় নেই, আওকাতে মাকরুহাতেও এই নামাজ আদায় করা যাবে। কাবা ও মাকামে ইব্রাহিম কে সামনে রেখে এই নামাজ আদায় করা উত্তম।
কিন্তু যদি মানুষের ভিড়ের কারণে উক্ত নামাজের যায়গায় নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়। তাহলে মাসজিদুল হারামের যেকোনো যায়গায় আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে।
সতর্কতাঃ নামাজ আদায়ের সময় খেয়াল রাখবেন, মহিলারা পরপুরুষদের সাথে দাঁড়িয়ে বা পুরুষরা গায়রে মাহরাম নারীদের সাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারবেন না।
সহজভাবে উমরাহ করার নিয়ম How to Performing umrah in Bengali, umrah korar Niyom
সাফা ও মারওয়া কিভাবে সায়ী করবেন?
উমরাহ বা হজ্বের সায়ী আদায় করার জন্য প্রথমে সাফা পাহাড়ে যেতে হয়, সাফা পাহাড়ে উঠার সময় এই দোয়াটি পড়তে হয়।
إِنَّ الصَّفَاوَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِاللهِ □ د
সায়ীর দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ ইন্নাস স-ফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ’ইরিল্লাহ।
অর্থঃ নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমুহের অন্তর্ভুক্ত।
সাফা পাহাড়ে পৌঁছানোর পর সায়ী শুরু করার পূর্বে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে, মুনাজাতের ন্যায় হাত উত্তোলন করে দোআ করবেন।
এবং দোয়াতে আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়ীর সময় যে দোয়া করেছেন, সে দোয়াটি পাঠ করবেন।
সায়ীর দোয়া শুরু করার আগে তিনবার “আল্লাহু আকবার” বলবেন। এরপর সায়ীর দোয়া শেষ করে সায়ী করা আরম্ভ করবেন।
সায়ীর দোয়া আরবীঃ
لَا اِلَهَ اِلَّااللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرُ،لَا اِلَهَ اِلَّااللهُ وَحْدَهُ اَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَامَ الْاَحْزَابَ وَحْدَهُ □ د
সায়ীর মুনাজাতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং ক্বদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়া’দাহু ওয়া নাসরা আবদাহু ওহাঝামাল আহঝাবা ওয়াহদাহু।
অর্থঃ
আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ বা উপাস্য নেই, সকল রাজত্ব ও প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য। তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি ঐ সত্তা, যিনি স্বীয় ওয়াদা পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন। এবং তিনি একাই সম্মিলিত হস্তি বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন।
এই দোআ করার পর নিজের পছন্দমত দোয়া করবেন ও আল্লাহর কাছে নিজের দিলের আকাঙ্খা প্রকাশ করবেন। সাফা পাহাড়ের সায়ী আরম্ভ করার পূর্বে এবং মারওয়া পাহাড়ের প্রথম চক্করে এইভাবে দোআ করবেন। তবে বাকী পাঁচ চক্করের সময় এভাবে হাত তোলে এই দোআসহ দোআ করার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু আপনি চাইলে দোআ করতে পারেন ও সাফা মারওয়ায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটার সময় যে কোন দোআ ও দুরুদ পাঠ করতে পারেন।
এইখানে যত বেশী দোআ করতে পারেন ভালো, কারণ এইগুলো দোআ কবুলের স্থান।
দোআ শেষ করে সায়ী শুরু করতে হবে অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাত চক্কর দিতে হবে।
সাফা পাহাড়ের দোআ শেষ করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা শুরু করবেন, একটু হাঁটার পরেই দেখবেন কিছুটা জায়গা সবুজ লাইট দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। এই সবুজ চিহ্নিত জায়গাটিতে পুরুষগণ একটু দ্রুত দৌড়ানোর ভান করে হাঁটবেন। তেমনিভাবে মারওয়া পাহাড়েও একই কাজ করবেন ও একই দোআ পড়বেন।
কিন্তু মহিলাগণ স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। সবুজ চিহ্নিত জায়গাটি শেষ হলে আবারো স্বাভাবিক ভেবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে যাবেন।
এভাবে সায়ী’র প্রথম চক্কর শেষ হবে। আর আপনার সায়ীর সাত চক্করের বাকী ছয় চক্কর এভাবে গণনা করবেন।
তথাঃ সাফা থেকে মারওয়ার প্রথম পর্যন্ত এক চক্কর আর মারওয়া থেকে সাফার প্রথম পর্যন্ত দ্বিতীয় চক্কর এভাবে সাত চক্কর দিতে হবে। আর সাফা থেকে সায়ী শুরু করে মারওয়াতে গিয়ে সায়ী শেষ করবেন।
উদাহরণ
যেমনঃ সায়ীর ১ম চক্কর গণনা করবেন সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত। ২য় চক্কর মারওয়া পাহাড় থেকে সাফা পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত। ৩য় চক্কর সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত। ৪র্থ চক্কর আবার মারওয়া পাহাড় থেকে সাফা পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত।
৫ম চক্কর সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত। ৬ষ্ঠ চক্কর মারওয়া পাহাড় থেকে সাফা পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত। ৭ম চক্কর সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের প্রথম পর্যন্ত এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সায়ী শেষ করবেন।
বিঃদ্রঃ সাফা ও মারওয়ার চক্কর গণনার ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল করে থাকেন। সাফা ও মারওয়া উভয়ের চক্কর শেষ করে দুই চক্করকে এক চক্কর গণনা করে সর্বমোট ১৪ দেয়। এবং নিজের কারণে নিজেকে কষ্ট দিয়ে দূর্বল বানিয়ে হজ্ব ও উমরার অন্যান্য রোকণ আদায়ে উদাসীন হয়ে যায়।
সুতরাং হজ্ব ও উমরা আদায়ের সময় সায়ীর চক্কর গণনার ক্ষেত্রে একটু সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
মাথা মুণ্ডন ও উমরা থেকে হালাল হওয়ার নিয়ম
সায়ীর মোট সাত চক্কর শেষ করার পর পুরুষ ওমরা পালনকারীগণ মাথা মুণ্ডন করে নিবেন বা মাথার চারদিকের চুল সমান পরিমাণে ছেঁটে নিবেন।
তবে মাথা মুণ্ডন বা কামানোই উত্তম। মনে রাখবেন, চুল ছোট করার ক্ষেত্রে মাথার যে কোন স্থান থেকে একটু করে কাটলে চলবে না বরং মাথার চতুর্পাশ দিয়ে সমান পরিমান কাটতে হবে।
আর মহিলা উমরা পালনকারীগণ সবগুলো চুল একত্র করে নিজে বা মাহারাম পুরুষ দিয়ে চুলের অগ্রভাগের এক ইঞ্চি পরিমান কেটে নিবেন।
এভাবে উমরাহ্ পূর্ণ হয়ে যাবে এবং উমরা থেকে হালাল হয়ে যাবেন। আর ইহরাম কালের নিষিদ্ধ কাজগুলো আপনার জন্য এখন হালাল হয়ে যাবে। ইনশা- আল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা আপনার ও আমাদের সকল নেক আমল ও উমরাহকে কবুল করুন। এবং যাদের উমরার নিয়ত রয়েছে তাদের নিয়তকে আল্লাহ কবুল করে, তাদেরকে উমরা ও হজ্ব পালনের তাওফিক দান করুন। আমীন ।
ওমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া PDF Book Download করুন নিচের লিংক থেকে। 👇👇👇
উমরাহ পালন করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া সহ PDF বই ডাউনলোড করুন সম্পূর্ণ ফ্রি তেই
উমরাহ করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া PDF বই সহ।
বিঃদ্রঃ বইটি ডাউনলোড করতে আপনার ওয়েব ব্রাউজারে ইমেল (gmail) লগইন করা আবশ্যক হতে পারে। এখান থেকে আপনার গুগল ড্রাইভে ট্রান্সফার করার জন্য এই প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ পবিত্র রমজানুল মোবারকে উমরাহ পালনের ফজিলত।
আরো পড়ুনঃ মিকাত কাকে বলে? মিকাত কত প্রকার ও কি কি? এবং বাংলাদেশী হাজীদের মিকাত কোনটি?
পড়ুনঃ ছোটদের ইসলামিক গল্প। নবীজীর গল্প।
আরো পড়ুনঃ নফসকে নিয়ন্ত্রণের ১৫ টি উপায়।