কথা বলে বুনা গোশত
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 👋 হে মোর প্রিয় ছোট্ট মনি ও আলোক উজ্জ্বল নক্ষত্র! আশা করে তুমি/তোমরা ভালোই আছো! আজকে আমি তোমাদের শোনাব খুব সুন্দর ও আশ্চর্যকর ছোটদের একটি ইসলামিক গল্প, কথা বলে বুনা গোশত এই সম্পর্কে।
আচ্ছা, তোমরা হয়তো গোশতের টুকরাকে নড়তে দেখেছ! এবং কৈ মাছকেও কাটার পর নড়তে দেখেছ। কখনো কি শুনেছ বা ভেবেছ যে গোশতের টুকরা ও কথা বলতে পারে! তাও আবার বুনা করা গোশত।
শুনতেই অবাক লাগছে তাইনা?? হাঁ, বাস্তবে এমনই এক আশ্চর্যকর ঘটনা ঘটেছিল আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে।
স্বাভাবিকভাবে এমন ঘটনা সাধারণত ঘটে না বা ঘটা সম্ভব নয়।
তবে যেহেতু বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটেছে আমাদের প্রিয় নবীজীর সাথে তাই এটি তার মোজেজা বা নবুওতের সত্যতা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক অর্পিত অলৌকিক শক্তি।
যেটি আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করেই তাঁর প্রিয় নবীর হাতে ঘটিয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা চাইলে সবকিছুই সম্ভব তিনি সর্বধর ও সর্বশক্তিমান।
তিনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন, তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারেন ও জীবিতকে মৃত্যে পরিণত করতে পারেন।
ঠিক তেমনিভাবে তিনি বাক-শক্তিহিনকেও কথা বলার শক্তি দিতে পারেন। তাই তিনি আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোজেজা স্বরুপ বাকশক্তিহিন বুনা গোশতকে কথা বলার শক্তি দান করেছিলেন।
আচ্ছা, কথা দীর্ঘ না করে চলো শুনি সেই ঘটনা বুনা গোশত কথা বলার ঘটনা।
বিস্তারিত ঘটনা
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একবার এক জনৈক নারী নবীজীর জন্য কিছু বুনা গোশত হাদিয়া পাঠান। কিন্ত তার এই হাদিয়া প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিলো অনেক খারাপ ও জগণ্য।
সেই নারী নবীজীর জন্য বুনা গোশতে বিষ মিশিয়েছ এনেছিল। সেই নারী ছিলেন ইয়াহুদি ধর্মালম্বি, ইয়াহুদিদের একটি পরম্পরিক স্বভাব ছিলো নবী/ রাসূলদের কষ্ট দেয়া।
তারা কষ্ট দিয়েছিল হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে। এমনকি আমাদের নবী দু-জাহানের সর্দার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও তারা কষ্ট দিয়েছিল।
সেই ইয়াহুদি নারীর বদ মতলবের কথা আমাদের নবীজী জানতেন না। আর তিনি জানবেনই বা কিভাবে?! তিনি তো গায়েব/ভবিষ্যতের/ অদেখা বিষয়ের অগ্রিম খবর জানতেন না।
বরং আল্লাহ তা’য়ালা ভবিষ্যতের যে বিষয় তাঁকে জানাতেন বা বলে দিতেন, তিনি তাই বলতেন অথবা মানুষের নিকট সেই বাণী পৌঁছাতেন। নিজে থেকে তার শক্তি সামর্থ্য দিয়েও গায়েবের কোন বিষয় জানা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
কারণ, গায়েবের সংবাদ জানেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা, যাহা আল্লাহ কুরআনে কারীমে সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।
যাইহোক, তার পাঠানো সেই ভুনা গোশত নবীজী ও তাঁর কয়েকজন সাহাবী খাওয়া শুরু করলেন। পরক্ষণেই নবী কারীম সা. বললেন, সবাই গোশত থেকে হাত উঠিয়ে নাও, কেউ আর একটু গোশতও মুখে দেবে না! তখন সবাই তো অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, কী হলো নবীজী কেন আমাদের গোশত খাওয়া থেকে বারণ করছেন।
তখন নবীজী বললেন,
এই গোশতই আমাকে বলে দিয়েছে যে, তাতে বিষ মেশানো হয়েছে। সুতরাং খবরদার তোমরা তাতে হাত দিবে না।
কিন্ত নবীজী সাহাবীদের নিষেধ করার পূর্বেই একজন সাহাবী উক্ত গোশত থেকে খেয়ে ফেলার কারণে ঐ সাহাবীর ইন্তেকাল হয়ে যায়।
তার মৃত্যুতে নবীজী শোকাতিত হন ও কষ্ট পান। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা নবীজীকে রক্ষা করলেন। নবীজীর কিছু হল না।
এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই ইহুদী নারীকে ডেকে পাঠালেন। এবং বললেন, তুমি কেন খাবারে বিষ মিশিয়েছ? সে বলল, আপনাকে কে বলল যে, আমি এতে বিষ মিশিয়েছি?
তখন নবীজী বললেন, তুমি যেই গোশতে বিষ মিশিয়েছ সেই গোশতই আমাকে বলে দিয়েছে! এতে বিষ মিশ্রিত করা হয়েছে।
সুতরাং তুমি আমাকে বল যে, তুমি কী উদ্দেশ্যে এতে বিষ মিশ্রিত করেছ? তখন সে বলল, আমার জানা মতে আপনি যদি সত্য নবী হয়ে থাকেন তাহলে এই বিষ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তা না হন, সাধারণ রাজা-বাদশা হন তাহলে আপনার থেকে মানুষেরা নিষ্কৃতি পাবে।
হ্যাঁ, ঐ ইহুদী নারীর ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। বিষ মিশ্রিত গোশত নবীজীর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বরং এর মাধ্যমে নবীজীর এমন মুজেযা প্রকাশ পেয়েছে, যাহা মুমিনের ঈমান আরো মজবুত করেছ এবং কাফেরদের সামনে নবীজীর সত্যতা প্রমাণিত করেছে।
উক্ত গল্প থেকে তুমি কি কি শিখতে পারলে তা নোট করে তোমার খাতায় লিখো বা নিচে মন্তব্যের ঘরে মন্তব্য লিখে জানাও।
জাযাকাল্লাহ / ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: বি:দ্রঃ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫১২ সুনানে কুবরা, ও বায়হাকী, হাদীস ১৬০১০ মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৪৯৬৭ সোর্স
পড়ুনঃ ছোটদের ইসলামিক গল্প নবীজীর বরকত
আরো পড়ুনঃ ছোটদের গল্প 2 আলো দিল এক লাঠি
আরো পড়ুনঃ সন্তানের জন্য পিতার সেরা ১৫ টি উপদেশ