বাংলাদেশীদের মিকাত ইয়ালামলাম মসজিদ

মিকাত কাকে বলে ও মিকাত কয়টি? এবং বাংলাদেশীদের মীকাত কোনটি?

মিকাত কি?

মিকাত কাকে বলে? ও মীকাত সম্পর্কীয় সকল তথ্য একসাথে জানুন। মিকাত শব্দের অর্থ হলো নির্দিষ্ট সময় বা একত্রিত হওয়ার নির্দিষ্ট স্থান। মিকাত এটি একটি আরবী শব্দ وقت (ওয়াক্ত) শব্দের বহুবচন এবং তার বহুবচনের বহুবচন مواقيت (মাওয়াকীত) যেটি সময় এবং স্থান উভয়টি বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

শরীয়তের পরিভাষায় মিকাত বলা হয়, ঐ সকল নির্দিষ্ট স্থানকে যে সকল স্থান মক্কার বহিরাগত হজ্ব ও উমরাহ্‌ পালনকারীদের জন্য ইহরাম বিহীন অতিক্রম করা শরীয়ত কর্তৃক নিষেধ বা না জায়েজ।

এবং যদি কোন উমরাহ্‌ পালনকারী তার মিকাত ইহরাম বিহীন অতিক্রম করে, তাহলে তার জন্য মিকাতে পুনঃরায় ফিরে আসা আবশ্যক হয়ে যায়।

অন্যথায় (অর্থাৎ যদি সে মিকাতে ফিরে না আসে তাহলে)  তার উপর ধম বা জরিমানা ওয়াজিব হয়ে যায়।

জ্ঞাতব্যঃ উমরাহ বা হজ্বের জন্য শুধু ইহরামের লেবাস পরিধান করা মানে ইহরাম বাঁধা নয়। বরং মিকাত থেকে বা এর পূর্বে উমরাহ্‌ বা হজ্বের নিয়ত করলেই ইহরাম বাঁধা বা মুহরিম হয়।

আরও পড়ুনঃ পবিত্র মাহে রমাদানে উমরাহ পালনের ফজিলত।

মিকাত কত প্রকার?

হজ্ব ও উমরার মিকাত মোট দুই প্রকারঃ ১। স্থান সংক্রান্ত মীকাত ২। সময় সংক্রান্ত মীকাত।

প্রথম প্রকার মীকাত, স্থান সংক্রান্ত মীকাত মোট ৫ টি যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে প্রদান করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত সময়/কাল সংক্রান্ত মীকাত। এটি আবার দু’ভাগে বিভক্ত। এক হজ্বের সময়কাল বা মীকাত, দুই উমরাহর সময়কাল।

হজ্বের সময়কাল হলো, হজ্বের মাসসমূহ ১, শাওয়াল ২, যিল-কদ ৩, যিল-হজ্ব মাস। এই তিন মাস হলো হজ্বের মাস এবং বছরের এই তিন মাস বিহীন অন্য কোন সময় হজ্ব পালন করা যায় না।

উমরাহর সময়কাল হলো, উমরাহ পালনের জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই। বছরের যে কোন সময়ই উমরাহ পালন করা যায়।

মিকাত কয়টি ও কি কি?

মিকাত কয়টি ও কি কি? Macca Performing umrah

হজ্ব ও উমরার মিকাত সর্বমোট ৫ টি। হজ্ব ও উমরা পালনের জন্য দেশ ও এলাকা ভিত্তিক কিছু নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে, যেগুলো থেকে হজ্ব ও উমরা পালনকারীদের ইহরাম বাঁধতে হয়। এবং সেই সকল স্থান হজ্ব ও উমরা পালনকারীদের জন্য ইহরাম বিহীন অতিক্রম করা জায়েজ নেই।

এই স্থানগুলো বা মিকাত গুলো বিভিন্ন দেশ ও এলাকা ভিত্তিক পাঁচ ভাগে বিভক্ত বা পাঁচটি মিকাত হিসেবে পরিচিত।

হজ্ব ও উমরার মীকাত সর্বমোট ৫ টি।

 

১। যুলহুলাইফা ذي الحليفة

مسجد ذي الحليفة | মিকাত

যুলহুলাইফা (ذي الحليفة) স্থান পরিচিত। যুলহুলাইফা বর্তমানে সৌদি আরবের মদিনাতুল মুনাওয়ারা শহরের ওয়াদিয়ে আক্বিকের “আবার আলী” বা আবইয়ারে আলী নামক স্থানে অবস্থিত। যেটি যুলহুলাইফা মাসজিদ বা মাসজিদুল মীকাত নামে পরিচিত এবং এটি মসজিদে নববী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার সন্নিকটে অবস্থিত। এবং এই মসজিদে যুলহুলাইফা থেকেই হাজ্বী ও উমরাহ পালনকারীগণ ইহরাম বাঁধেন।

এবং এই যুলহুলাইফা হলো মদিনায় বসবাসকারী ও মদিনার দিক থেকে জল, স্থল, ও আকাশসীমা দিয়ে অতিক্রমকারী দেশের হাজ্বী ও উমরাহ পালনকারীদের মীকাত। এটি মক্কা থেকে ৪৩৫ কি.মি দূরে এবং মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মিকাত।

২। আল-জুহফা الجحفة

আল-জুহফা الجحفة পরিচিতি। আল-জুহফা সৌদি আরবের রাবেগ শহরে মক্কা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এই জুহফা হলো সিরিয়া, মিসর ও মরক্কোসহ এই দেশগুলি ও সেদিক দিয়ে জল, স্থল এবং আকাশসীমা দিয়ে অতিক্রম কারী হাজ্বী ও উমরাহ পালনকারীদের মীকাত।

৩। ইয়ালামলাম يلملم

বাংলাদেশীদের মিকাত ইয়ালামলাম মসজিদ

ইয়ালামলাম يلملم হলো মক্কা শরীফ থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি উপত্যকা। যেটি মূলত ইয়েমেন ও ইয়ামেনের দিক থেকে জল, স্থল, ও আকাশসীমা দিয়ে আসা সকল দেশীয় হাজীদের মীকাত। আর এই ইয়ালামলাম হলো আমাদের বাংলাদেশীদের মিকাত। বা বলতে পারেন, আমাদের বাংলাদেশী হাজীদের মীকাতের নাম ইয়ালামলাম

এবং বর্তমানে এটি আল-সা’দিয়া (السعدية) নামে পরিচিত।

৪। কারনুল মানাযিল قرن المنازل

কারনুল মানাযিল قرن المنازل এটি তায়েফ শহরের ওয়াদি আল-সাঈল কাবীর (السيل الكبير) অঞ্চলে অবস্থিত। পবিত্র মক্কা থেকে যেটি প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে এবং তায়েফ শহরাঞ্চল থেকে ৫৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

এবং এটি নাজদ, তায়েফ ও এই স্থান অতিক্রম করে আসা জল, স্থল, ও আকাশসীমা অতিক্রমকারী সকল দেশের হজ্ব ও উমরা পালনকারীদের মীকাত।

৫। যাতু ইরক ذات عرق

যাতু ইরক ( ذات عرق) পরিচিতি। যাতু ইরক এটি পবিত্র মক্কা শহরের তায়েফ প্রদেশের আক্বীক এলাকার একটি পাহাড়ী স্থান। এখানে যে ইরক নামে যে পাহাড়টি রয়েছে তার প্রতি ইঙ্গিত করে তার নাম রাখা হয়েছে যাতু-ইরক।

কারণ এই পাহাড়টি জাবালে তাহামার শেষাংশে অবস্থিত। আর এটি তাহামা ও নাজদের মাঝে পার্থক্যকরী বিধায় এই অঞ্চলটি ইরাক, খোরাসান, নজদের মধ্য অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল, এবং এই এলাকা দিয়ে অতিক্রান্ত দেশী হাজ্বী ও ও উমরাহ পালনকারীদের মীকাত।

এবং বর্তমানে যাতু-ইরক এলাকাটি দরীবা নামে পরিচিত।  আর এটি মক্কাতুল মুকাররমা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এই ৫ টি মিকাত উপরোক্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ও যারা এ দিক থেকে হজ ও উমরা আদায় করার জন্য অতিক্রম করবে তাদের মিকাত।

কিন্ত যাদের বাড়ি বা বসবাসের স্থান উপরে উল্লেখিত ৫ টি মিকাতের অভ্যন্তরে মক্কার দিকে, তাদের জন্য হজ্ব ও উমরার মিকাত তাদের নিজের ঘর। তারা ঘর থেকেই হজ্ব ও উমরার ইহরাম বাঁধবে।

তবে যাদের বাড়ী হারামে মক্কার ভিতরে তারা হিল বা হালাল এলাকায় এসে উমরার নিয়ত করবে। এবং হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় বসেই হজ্বের নিয়ত করবে।

বিঃদ্রঃ যে সকল হজ্ব ও উমরা পালনকারীর পথে এই ৫ টি মিকাত পড়ে না। তারা তাদের মিকাতের সর্বাধিক কাছাকাছি যে কোনস্থানে বা সমান সীমায় পৌঁছলে সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধবে। চাই তারা বিমান, গাড়ি বা নৌযান যেকোনো পথে আসুক না কেন।

মিকাত হিসেবে সৌদি সরকার কর্তৃক যে ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে, সেখানে অবতরণ করে ইহরাম বাঁধার কোন বাধ্যকতা নেই।

বরং ঐ স্থানের কাছাকাছি যে কোন স্থানেই ইহরাম বাঁধতে পারবে। চাই সেটা বিমানে, গাড়িতে কিংবা নৌযানে হোক।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এ সকল দেশের হাজ্বীদের মীকাত কোনটি?

আমাদের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মক্কা থেকে পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দেশ গুলোর হাজ্বী ও উমরাহ পালনকারীদের নির্দিষ্ট মীকাত হলো ইয়ালামলাম।

স্বাভাবিকভাবে আমাদের বাংলাদেশী হাজীগণ যেহেতু আকাশ পথে গমণ করে থাকেন। আর বিমান করনুল মানাযিল ও যাতু-ইরক এর মাঝামাঝি হয়ে ইয়ালামলাম যেটি বাংলাদেশীদের মীকাত সেই মিকাত সীমানা ২০/২৫ মিনিট পূর্বে অতিক্রম করে, জেদ্দা বিমান বন্দরে অবতরণ করে থাকে।

ফলে বিমান জেদ্দায় অবতরণের ২০/২৫ মিনিট পূর্বে আপনাকে বা বাংলাদেশীদের অবশ্যই ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। অন্যথায় ইহরাম বিহীন মীকাত অতিক্রম করার ফলে আপনাকে ধম বা জরিমানা দিতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ আহকামে হজ্ব পৃষ্ঠাঃ ৩৬-৪২

জ্ঞাতব্যঃ উমরাহ বা হজ্বের জন্য আপনি বিমান বন্দর বা আপনার নিজ বাসা থেকেও ইহরাম বাঁধতে পারবেন। তবে দীর্ঘ সময় মুহরিম থাকার কষ্ট লাগব করার জন্য আপনি আগে উমরাহর লেবাস পরিধান করে, বিমানে বসে পরবর্তী সময় মিকাতে এসে হজ্ব বা উমরাহর নিয়ত করে মুহরিম হবেন।

আরো পড়ুনঃ উমরাহ পালনের সহজ নিয়ম ও পূর্ণ গাইড লাইন PDF Book সহকারে।

আরো পড়ুনঃ ছোটদের ইসলামিক গল্প।

TAGS:

#মিকাত শব্দের অর্থ কি? #বাংলাদেশী হাজীদের মিকাত কোনটি?

#বাংলাদেশের মিকাতের নাম #ভারতীয় হাজীদের মীকাত কোনটি? #ভারতের মীকাত কি?

#مواقيت العمرة
#Miqat in Bengali #Miqat for Bangladeshi’s to Performing umrah or Hajj #Miqat for Bengali Haji in Bengali #Miqat in Bengali 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!