রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সহ। এবং বাংলায় রোযার নিয়ত করার নিয়ম সাথে তথ্যসূত্রসহ হাদীসে বর্ণিত ইফতারের দুআ সমূহ বাংলায় শিখতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
পবিত্র রমজানের গুরুত্ব ও রোজার নিয়ত
মুসলিমদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি ইবাদাত হলো সিয়াম (الصيام) বা রোজা, কেননা রোজা বিহীন অন্যান্য ইবাদাতের প্রতিদান/সাওয়াব আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বা কখনো তার চেয়েও বেশি প্রদান করেন।
কিন্তু একটি মাত্র ইবাদাত যার সাওয়াব প্রদানে আল্লাহ তাআলা কোনো লিমিটেশন দেন নাই, বরং আল্লাহ তাআলা বলেন, রোযার একমাত্র প্রতিদান বা সাওয়াব আমি নিজ হাতে পরকালে রোযাদারদের বিনিময় প্রদান করবো। বা আমি নিজেই রোযাদারের রোযার বিনিময় হবো। তথ্যসূত্রঃ সহীহ মুসলিম হাদীস নং, ১১৫১
সুতরাং আমাদের উচিত পবিত্র মাহে রমজানে পূর্ণ এক মাসের রোযা, তারাবীহের নামাজ, তাহাজ্জুদ, কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত, দান-সদকা ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন করা।
এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থেকে আত্মার পরিশুদ্ধি করা। পবিত্র রমযান মাস মুসলিমদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ, তার ফজিলত কি? ও রমজান সম্পর্কৃত কিছু মাসায়েল আমরা সর্বশেষ বিস্তারিত উল্লেখ করবো। প্রথমে আমরা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ উল্লেখ করবো।
রোজার নিয়ত আরবী এবং বাংলায়
রমজানের রোজার নিয়ত আরবীঃ
نَوَيْتُ أَنْ أََصُوْمُ غَدًا مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضًا لَكَ، رَبَّنَا فَتَقَبَّلهُ مِنِّيْ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ○د
রমজানের রোযার নিয়তের বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আসুমু গাদান মিন শাহরি রমাদানাল মুবারকি ফারদান লাকা, রব্বানা ফাতাক্বব্বালহু মিন্নি ইন্নাকা আন্তাস সামীউল আলীম।
অনুবাদ ও বাংলায় এভাবে রোযার নিয়ত করতে পারেন। (হে আল্লাহ) আমি এখন নিয়ত করতেছি যে, আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের ফরজ রোজা রাখবো। হে আমার প্রতিপালক সুতরাং আপনি আমার রোজাকে কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্ব শ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
বিঃদ্রঃ মূলত রোযার জন্য মৌখিকভাবে নিয়ত করা আবশ্যিক নয়, বরং অন্তরে রোযার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খেলেই রোযার নিয়ত হয়ে যায়।
সুতরাং এমন ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, মুখে রোযার নিয়ত না করলে রোযা হবে না। আমরা এখানে শুধুমাত্র কিছু কিছু মানুষের মনের প্রশান্তির জন্য এখানে দোআটি উল্লেখ করলাম।
ইফতারের দোয়া আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সহ
ইফতারের দোয়া আরবী
اَللهُمَّ لَكَ (أي لِرِضَاكَ) صُمْتُ، وَتَوَكَّلْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ ○ سنن أبي داؤود، ٢٣٥٨
ইফতারের দোয়ার বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া তাওয়াক্কালতু, ওয়া আʼলা রিযক্বিকা আফত্বরতু।
অনুবাদ ও বাংলায় ইফতারের দোআঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্যই রোযা রেখেছি, (আর আমি আপনার উপর ভরসাস্থাপন করি) এবং আপনার দেওয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করছি।
(আরবী না জানলে বাংলায় এভাবে বলেও খুজুর অথবা পানি পান করে আপনি ইফতার করতে পারেন) তথ্যসূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৩৫৮
হাদীসে বর্ণিত ইফতারের দোয়া আরবী-বাংলা।
ইফতারের দুআ আরবীঃ ২
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى○د سنن أبي داؤود . الحديث ٢٣٥٧
ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ যাহাবাজ জমা-উ ওয়াব ত্বাল্লাতিল উরুকু ওয়া চাবাতাল আজরু ইন-শাআল্লাহু তাআলা।
ইফতারের দুআ অনুবাদঃ পিপাসা নিবারিত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল আর রোজার ছাওয়াব প্রাপ্তির খাতায় লিখিত হয়ে গেল। (তথ্যসূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২৩৫৭)
বিঃদ্রঃ সর্বদাই সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করার চেষ্টা করুন। কারণ হাদীস শরীফে আছে, মানুষ যতদিন সময় হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মাঝে থাকবে। (তথ্যসূত্রঃ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৯৮)
আরো পড়ুনঃ ঈদের নামাজের সঠিক নিয়ম ও ঈদের দিনের সুন্নাত সমূহ।
ইফতারের পূর্ব মুহুর্তে পাঠ করার দোআ হাদীস ও কুরআন মাজীদ থেকে
আমরা এখানে হাদীস শরীফে বর্ণিত এমন কিছু দোয়া উল্লেখ করবো, যেগুলো আপনি ইফতারের পূর্বের দোয়া ও মুনাজাত স্বরুপ পড়তে পারেন। কেননা ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়, আর আল্লাহ তাআলা রোযাদারের দুআ কখনো ফিরিয়ে দেননা। তথাঃ সর্বদা রোযাদারের দুআ আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। (তথ্যসূত্রঃ ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৭৫৩) এটি হলো ইফতারের সময় দোয়া কবুল এর হাদীস।
তাই আমাদের উচিত ইফতারের সময় হওয়ার অনেক আগেই ইফতার নিয়ে দস্তরখানে বসে ইফতারের অপেক্ষা করা ইস্তেগফার, তাসবীহ, ও দোয়া মুনাজাত করা।
আরো পড়ুনঃ তারাবীহের নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত।
সাহাবীগণ ইফতারের সময় যে দোআগুলো পড়তেন।
১, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আম’র ইবনুল আছ রাঃ নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন।
اَللهُمّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ اللَّتِيْ وَسِعَتْ كُلِّ شَيْءٍ…. فَإغْفِرْلِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْم..د
অনুবাদ ও বাংলায় দোয়াঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার ঐ রহমতের ওছিলা করে প্রার্থনা করছি, যা সকল বস্তুতে পরিব্যাপ্ত, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। ( তথ্যসূত্র ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৭৫৩)
২, হযরত আয়শা রাঃ এই দোয়াটি বেশী বেশী পাঠ করতেন, সুতরাং আমরাও ইফতারের দোয়া মুনাজাতে এই দোয়াটি পড়বো।
اَللهُمَّ إِنّكَ عَفُوٌّ، تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنّا.○د
অর্থ ও বাংলায় দোয়াঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে ভালবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তথ্যসূত্রঃ আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ হাদীস নং ৪৮১)
এছাড়াও আমরা কুরআন হাদীসে বর্ণিত ইস্তেগফার ও অন্যান্য দোআ সমূহ যুক্ত করে ইফতারের পূর্বে দোয়া করবো।
বিবিধ মাসায়েল
মাসআলাঃ কি দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নাত?
উত্তরঃ খেজুর দিয়ে দিয়ে ইফতার করা সুন্নত, তবে যদি খেজুর না থাকে। তাহলে শুধু পানি দিয়ে ইফতার শুরু করুন। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যখন কোন রোযাদার ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তা বরকতের খাদ্য। যদি তাহা না থাকে তাহলে পানি দ্বারা। কেননা তা পবিত্র বস্তু।
তথ্যসূত্রঃ জামে তিরমিযী হাদীস নং ৬৯৫
আরো পড়ুনঃ পবিত্র মাহে রমজানে ওমরাহ পালনের বিশেষ ফজিলত।
আরো পড়ুনঃ ওমরাহ পালনের নিয়ম ও আহকাম সমূহ সাথে PDF Book
Also Read: 5 Best Financial Planning Apps in USA